জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) এর কার্যকরী সভাপতি ও চট্টগ্রাম-৮ আসনের সদ্য প্রয়াত সংসদ সদস্য মঈন উদ্দীন খান বাদলকে নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে একটি আবেগঘন স্ট্যাটাস দিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও শিক্ষা উপমন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল। স্ট্যাটাসটি যার চোখে পড়েছে তাকেই নাড়া দিয়েছে।
নওফেল চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক মেয়র চট্টলবীর মহিউদ্দীন চৌধুরীর ছেলে। চট্টগ্রামের রাজনীতিতে মহিউদ্দিনের বিশ্বস্ত ছিলেন বাদল। দুজন দু’দল করলেও তাদের মধ্যে হৃদ্যতা ছিল অসাধারণ। তারা দুজনেই ঘনিষ্ট বন্ধু ছিলেন। মহিউদ্দিন চৌধুরীর যে কোনো পারিবারিক অনুষ্ঠানে থাকতেন বাদল। তার পরিবারের সঙ্গে বাদলের ছিল নিবিড় যোগাযোগ।
বৃহস্পতিবার সকালে ভারতের একটি হাসপাতালে মৃ’ত্যুবরণ করেন বাদল। এই সংবাদ পেয়ে ভে’ঙে পড়েছেন মহিউদ্দিনপুত্র নওফেল। নিজের ভেরিফাইড ফেসবুকে পেজে বাদলকে নিয়ে স্ট্যাটাস দেন নওফেল। মঈন উদ্দীন খান বাদলের মৃত্যুতে ‘আবারও পিতৃহারা হলাম’ বলে ওই স্ট্যাটাসে উল্লেখ করেন তিনি।
নওফেল লেখেন, ‘মঈনুদ্দিন খান বাদল। বীর মুক্তিযোদ্ধা, জাতীয় নেতা, অনলবর্ষী বক্তা, সংসদ সদস্য, বীর চট্টলার গৌরব, আরও অনেক কিছুতেই তাকে সম্বোধন করা যায়। না ফেরার দেশে তিনি আজ থেকে থাকবেন (ইন্না… রাজিউন)। মনে হচ্ছে যেন আবারও পিতৃহারা হলাম।’
‘চট্টলবীর’ এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর সঙ্গে বাদলের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক উল্লেখ করে নওফেল লেখেন, ‘দুবছর আগে হঠাৎ স্ট্রোক করে অসুস্থ হয়েছিলেন যখন, তখন তার বন্ধু মহিউদ্দিন চৌধুরীও গুরুতর অসুস্থ, হাসপাতালে। খুব আফসোস করতেন বন্ধুকে দেখে যেতে পারেন নাই। অশ্রু সজল নয়নে স্মরণ করতেন। আজ থেকে আমরা তাকে স্মরণ করবো।’
বাদলের সঙ্গে প্রথম পরিচয়ের কথা উল্লেখ করে নওফেল লেখেন, ‘প্রথম তার সঙ্গে আমার পরিচয় শৈশবে। এরশাদের শাসনের সময়। তৎকালীন পিজি হাসপাতাল, আজকের বঙ্গবন্ধু মেডিক্যালের রাজব’ন্দিদের কক্ষে। আমার বাবার প্রিজন সেলের সহব’ন্দি ছিলেন। এরশাদের সঙ্গে আপস করে মন্ত্রী হতে পারতেন, কিন্তু বেছে নিয়েছিলেন ব’ন্দি জীবন।’
বাদলের কাছ থেকে অনেক কিছু শিখেছেন উল্লেখ করে নওফেল লেখেন, ‘আমাকে সমাজতন্ত্র শেখাতেন, দেখতেও ছিলেন স্ট্যালিনের মত, ইম্পোজিং ব্যক্তিত্ব। আমার বাবার সঙ্গে হাস্যরস আর গভীর রাজনৈতিক আলোচনায় মগ্ন থাকতেন। মন্ত্রমুগ্ধের মত তার কাছ থেকে শুনতাম। পরবর্তীতে যখনই দেখা হতো, প্রতিবার তার কাছ থেকে শিখেছি।’
বাদলের দৃঢ়চেতা মনোভাবের প্রশংসা করে শিক্ষা উপমন্ত্রী নওফেল লেখেন, ‘রাজনৈতিক আলোচনা যে শুধুই পদবির আর ক্ষমতার রাজনীতি নয় এবং রাষ্ট্রনীতি, আদর্শ, উন্নয়ন, এসবই হচ্ছে রাজনীতির মূল আলোচনা, বারবার তার সান্নিধ্যে এসে তা অনুভব করেছি এবং অনুপ্রাণিত হয়েছি। বঙ্গবন্ধুর প্রশ্নে, তার সুযোগ্যা কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার রাজনৈতিক প্রজ্ঞা এবং নেতৃত্বের প্রশ্নে, সেই শৈশব থেকে দেখেছি অ-বিচল দৃঢ়তার সঙ্গে তাকে বলতে।’
বাদলকে নিয়ে নওফেল লেখার ইতি টানেন এভাবে, ‘তিনি আর আমাদের মাঝে নেই। বাংলাদেশের রাজনীতি আরও একজন বিরল প্রজ্ঞাবান রাজনীতিবিদকে হারালো। এ এক অ-পূরনীয় ক্ষ’তি। জাতীয় সংসদ আর জাতীয় রাজনীতি, হয়তোবা এই সিংহের গর্জন আর শুনবে না। কিন্তু চট্টগ্রামের মানুষ, বাংলাদেশের মানুষ, আদর্শিক রাজনীতির এই সিংহ পুরুষকে আজীবন স্মরণ করবেন। বেঁচে থাকবেন আমাদের প্রিয় মাঈনুদ্দিন খান বাদল, আমাদের হৃদয়ের মনিকোঠায়।’
উল্লেখ্য, বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ সময় সকাল ৭টা ৪৫ মিনিটে ভারতের বেঙ্গালুরুর নারায়ণ হৃদরোগ রিসার্চ ইনস্টিটিউট অ্যান্ড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃ’ত্যু করেন চট্টগ্রাম-৮ আসনের ৩ বারের নির্বাচিত সংসদ সদস্য ও বর্ষীয়ান রাজনীতিক মঈন উদ্দীন খান বাদল। তার লাশ দেশে আনার প্রক্রিয়া চলছে।