গত কয়েকদিনে রাজধানীতে মহামারির রূপ নিয়েছে ডেঙ্গু। ছোট শিশু থেকে বৃদ্ধ অনেকেই আক্রান্ত হচ্ছেন ডেঙ্গু জ্বরে। সবার মধ্যে আতঙ্ক ডেঙ্গু নিয়ে।
ইতিপূর্বে দেশে বিভিন্ন সময় ডেঙ্গু রোগ দেখা গেলেও এবারের মতো ভয়াবহ ছিল না। এবার যেমন আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে তেমনি মৃত্যুর সংখ্যাও বাড়ছে। এমন পরিস্থিতিতে ডেঙ্গু আতঙ্ক বিরাজ করছে দেশের সর্বত্র।
গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে ১৬৮৭ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন। আক্রান্তদের মধ্যে ৯৯২ জনই রাজধানীতে। সব মিলিয়ে চলতি বছর এ পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২১ হাজার ২৩৫ জন।
সরকারি হিসাবে এখন পর্যন্ত ডেঙ্গুতে ১৪ জনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করা হলেও বেসরকারি হিসাবে এ সংখ্যা অর্ধশত ছাড়িয়ে গেছে।
প্রকোপ বাড়ার পাশাপাশি পরিবর্তন হয়েছে ডেঙ্গুর ধরন ও লক্ষণের। আগে ডেঙ্গু হলে জ্বর অনেক বেশি জ্বর হতো। তবে এখন তেমনটি হচ্ছে না। এছাড়া কিছু নতুন লক্ষণ দেখা দিয়েছে।
ডেঙ্গুর বিষয়টি মানুষ জানলেও এর যে গতি-প্রকৃতিতে পরিবর্তন হচ্ছে, সে সম্পর্কে সচেতনতা নেই অনেকের। কাজেই সবাইকে এ ব্যাপারে সচেতন ও সতর্ক থাকতে হবে।
এ বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য জানিয়েছে ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত ডা. মতলেবুর রহমান।
ডা. মতলেবুর রহমান বলেন, ডেঙ্গুজ্বরের লক্ষণে অনেক পরিবর্তন এসেছে। যে কারণে অনেকে ডেঙ্গু আক্রান্ত হওয়ার পরেও বুঝতে পারে না।
তিনি বলেন, আমাদের দেশে ২০০০ সাল থেকে বেশি দেখা গেছে। টাইপ ওয়ান সেরোটাইপ দিয়ে তখন ডেঙ্গুটা হতো। ডেঙ্গু জ্বরের আসলে চারটি সেরোটাইপ রয়েছে। টাইপ ওয়ান, টাইপ টু, টাইপ থ্রি, টাইপ ফোর। এবার যেটি হচ্ছে ডেঙ্গু টাইপ থ্রি দিয়ে জ্বরটা বেশি হচ্ছে। এ বছর জ্বর অন্য বছরের চেয়ে কিছু পার্থক্য রয়েছে। আসুন জেনে নেই ডেঙ্গুজ্বরের নতুন লক্ষণ।
১. আগে প্রচণ্ড শরীর ব্যথা, র্যাশ, চোখে ব্যথা হলে আমি ডেঙ্গু জ্বর হয়েছে বলে ধারণা করতে পারি।
২. তবে এখন খুব একটা জ্বর নাই।
৩. জ্বর খুব বেশি না হলেও শুধু জ্বর জ্বর ভাব।
৪. শরীরে হালকা একটু দুর্বলতা।
৫. বমি হচ্ছে বা কারো হয়তো শুধু মাথাব্যথা।
৬. মানুষের মধ্যে একটি আতঙ্ক ছিল ডেঙ্গু হলে রক্ত দিতে হয়। প্লাটিলেট দিতে হয়। এ বছর বিষয়টি সম্পূর্ণ পরিবর্তন হয়ে গেছে।
৭. এ বছর দেখা গেছে, যারা মারা গেছেন বা ডেঙ্গুতে জটিলতায় ভুগছেন। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে তারা পানি স্বল্পতায় ভুগছেন। এ কারণে ডেঙ্গুর শক সিনড্রোম হচ্ছে।
৮. এখন ডেঙ্গুতে শরীর থেকে প্রচুর তরল বের হয়ে শরীরের ভেতরেই রয়ে যাচ্ছে। এটি রক্তনালি থেকে বাইরের দিকে চলে যাচ্ছে তরলটা। তখন প্রেশার কমে যাচ্ছে। এর ফলে হালকা দুর্বলতা লাগে। দুর্বলতা হওয়ার কারণে তিনি হয়তো চিকিৎসকের কাছে যাচ্ছেন না। তার প্রেশার কমে যাওয়ার কারণে শরীরে বিভিন্ন অঙ্গ- প্রত্যঙ্গে সঞ্চালন কম হচ্ছে।
উপরের লক্ষণগুলো দেখা দিলে অবশ্যই চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে।