একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ঠিক এক বছর পর জানুয়ারিতে ফের মুখোমুখি হচ্ছে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি। ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে নৌকা ও ধানের শীষের জমজমাট লড়াই দেখার অপেক্ষায় দেশবাসী।
ভোট সামনে রেখে প্রাথমিক প্রস্তুতিও নিচ্ছে দল দুটি। এ লড়াইয়ে জয়ী হতে মেয়র পদে শক্তিশালী প্রার্থী দেবে উভয় দলই। এ লক্ষ্যে খোঁজা হচ্ছে স্বচ্ছ ও ক্লিন ইমেজের নেতাদের। এবার আওয়ামী লীগের মেয়র পদে পরিবর্তন আসতে পারে- এমন আভাস পাওয়া যাচ্ছে।
এক্ষেত্রে উত্তরের প্রার্থী নিরাপদ থাকলেও ঝুঁকিতে আছেন দক্ষিণের মেয়র। অপরদিকে দুই সিটিতেই তরুণ প্রার্থীকে প্রাধান্য দিচ্ছে বিএনপি। উত্তরে গতবারের প্রার্থীই বহাল থাকলেও দক্ষিণে আসতে পারে নতুন মুখ।
দুই সিটির সম্ভাব্য মেয়র প্রার্থীদের নিজ এলাকায় সামাজিক কর্মকাণ্ডসহ গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে ভোটারদের পাশে থাকার নির্দেশ দিয়েছেন দলীয় হাইকমান্ড।
কেন্দ্রের নির্দেশ পেয়ে সম্ভাব্য প্রার্থীরা নির্বাচনের প্রস্তুতিও শুরু করেছেন। নেতাকর্মীদের সঙ্গে মতবিনিময়সহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময়ও করছেন কেউ কেউ।
নিজ নিজ প্রার্থীর পক্ষে তাদের সমর্থকরা পোস্টার ছাপানোসহ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও প্রচার চালাচ্ছেন। বসে নেই কাউন্সিলর প্রার্থীরাও। তারাও মাঠ গরম করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
জানুয়ারিতে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে ভোটগ্রহণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এ লক্ষ্যে ১৮ নভেম্বরের পর যে কোনো দিন দুই সিটি নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা হবে বলে জানিয়েছে ইসি। রোববার কমিশনের সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়।
এদিকে শুধু মেয়র নয়, কাউন্সিলর পদের জন্যও ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে চলছে ভোটের প্রস্তুতি। কাউন্সিলর পদেও সম্ভাব্য প্রার্থীদের ব্যাপারে খোঁজখবর নিতে শুরু করেছে দুই দল।
যাদের বিরুদ্ধে নানা অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে, তাদের এবার মনোনয়ন দেয়া হবে না বলে ক্ষমতাসীন দলের পক্ষ থেকে স্পষ্ট ঘোষণা দেয়া হয়েছে।
হাইকমান্ডের এমন নির্দেশ পেয়ে ত্যাগী ও যোগ্য নেতারা আশার আলো দেখছেন। দেরিতে হলেও এবার দলীয় মনোনয়ন পাবেন বলে প্রত্যাশা তাদের। দুই দলের বাইরে অন্যান্য রাজনৈতিক দল এবং স্বতন্ত্র অনেকেই নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য লে. কর্নেল (অব.) মুহাম্মদ ফারুক খান যুগান্তরকে বলেন, আওয়ামী লীগ সবসময় নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত। ঢাকা উত্তর-দক্ষিণ সিটি নির্বাচনের জন্য আমরা ৫ বছর ধরেই কাজ করছি। আমাদের মেয়র কাউন্সিলররাও কাজ করেছে।
কিছু কাউন্সিলরের বিরুদ্ধে অভিযোগ এসেছে। তাদের আমরা কোনো ধরনের সমর্থন বা সহায়তা দেইনি। দলের গঠনতন্ত্র ও দেশের আইন অনুযায়ী তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। কেউ অপরাধ করলে আওয়ামী লীগ তাদের সমর্থন দেয় না। আগামী দিনেও দেবে না।
তিনি আরও বলেন, এবারের নির্বাচনে পারিপার্শ্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় বিশেষভাবে প্রার্থীদের সততা ও ব্যাকগ্রাউন্ড পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হবে। আমার এটাও মনে হয়- যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আছে বা যারা সন্দেহজনক, তারা অনেকে এবার আর মনোনয়ন চাইবেই না। তবে মেয়র ও কাউন্সিলর পদে কারা নির্বাচন করবে, তাদের ব্যাপারেও আমরা খোঁজখবর রাখছি।
ঢাকা উত্তর-দক্ষিণ সিটি নির্বাচনে এবার স্বচ্ছ ভাবমূর্তির নেতাদের প্রাধান্য দেবে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। মেয়র পদে মনোনয়ন এবং কাউন্সিলর পদে দলীয় সমর্থনের ক্ষেত্রে প্রার্থীদের সততা ও ব্যাকগ্রাউন্ড বিশেষভাবে যাচাই-বাছাই করবে ক্ষমতাসীনরা।
এরই মধ্যে দলটির শীর্ষ কয়েক নেতা প্রার্থীদের বিষয়ে খোঁজখবর রাখছেন। দলের জন্য নিবেদিত, নিজ এলাকায় সামাজিক কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ত ও জনপ্রিয় নেতাদের বিশেষ নজরে রাখছেন তারা।
এবারের সিটি নির্বাচনে বিএনপি অংশগ্রহণ করবে বলে মনে করেন আওয়ামী লীগের নেতারা। দলটি নির্বাচনে অংশ নিলে ভোট জমজমাট হবে, সেই সঙ্গে কঠিন প্রতিদ্বন্দ্বিতাও হবে।
এ কারণে আগেই নির্বাচনের প্রস্তুতি নেয়ার জন্য নেতাকর্মীদের নির্দেশ দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।
সম্প্রতি তিনি বলেছেন, এবারের সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন চ্যালেঞ্জিং হবে। প্রতিপক্ষ আটঘাট বেঁধে নির্বাচনে নামবে। ঐক্যবদ্ধ হলে অনেক শক্তি আছে তাদের।
এদিকে ঢাকার দুই সিটিতে যোগ্যদের প্রার্থী করতে চায় আওয়ামী লীগ। দক্ষিণে মেয়র সাঈদ খোকন আবারও মনোনয়ন চাইবেন। তবে নানা কারণে তার মনোনয়ন ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। সেক্ষেত্রে পরিবর্তন দেখা যেতে পারে।
ফলে ঢাকা-১০ আসনের সংসদ সদস্য ফজলে নূর তাপস বা ঢাকা-৯ আসনের সংসদ সদস্য সাবের হোসেন চৌধুরী, এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি সফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন আলোচনায় রয়েছেন। তাদের যে কেউ প্রার্থী হতে পারেন।
অন্যদিকে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের প্রার্থী পরিবর্তনের সম্ভাবনা কম। কারণ নিজের যোগ্যতা প্রমাণে খুব বেশি সময় পাননি ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের বর্তমান মেয়র আতিকুল ইসলাম। সে বিবেচনায় তাকে আরেকবার সুযোগ দিতে পারে আওয়ামী লীগ।
চলমান ক্যাসিনোবিরোধী অভিযানে ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশনের বিভিন্ন ওয়ার্ডের কাউন্সিলরদের নাম আসে। তাদের বিরুদ্ধে ক্যাসিনো ছাড়াও চাঁদাবাজি, জমি দখলসহ বিভিন্ন অভিযোগও ওঠেছে। এরই মধ্যে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের দুই কাউন্সিলরকে গ্রেফতারও করেছে র্যাব।
এসব কারণে কাউন্সিলরদের ওপর ক্ষুব্ধ আওয়ামী লীগের হাইকমান্ড। এ ধরনের বেশির ভাগ কাউন্সিলরের কপাল পুড়তে পারে এবার। অবশ্য অনেক নেতার ধারণা, এ ধরনের কাউন্সিলররা এবার মনোনয়নই চাইবে না।