ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সিটি বসুন্ধরার চারটি কনভেনশান সেন্টার ও একটি প্রদর্শনী তাঁবুতে গড়ে উঠছে বাংলাদেশের বৃহত্তম এই কোভিড-১৯ হাসপাতাল
লন্ডনের এক্সেল এক্সিবিশন সেন্টারের “নাইটিঙ্গেল হাসপাতাল” ও মাদ্রিদের আইএফইএমএ কনভেনশন সেন্টারের আদলে কনভেনশন সেন্টারকে রূপান্তরিত করে বাংলাদেশেও তৈরি হয়েছে কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীদের জন্য বিশেষায়িত হাসপাতাল। এক বিশেষ প্রতিবেদনে সেসব নিয়ে বিস্তারিত জানিয়েছে বিবিসি।
ঢাকার বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার পাশে আইসিসিবি-ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সিটি বসুন্ধরার চারটি কনভেনশান সেন্টার ও একটি প্রদর্শনী তাঁবুতে গড়ে উঠছে দেশের সবেচেয়ে বড় এই কোভিড-১৯ হাসপাতাল।
বেসরকারি উদ্যোগে বসুন্ধরা গ্রুপ তাদের জমি ও অবকাঠামো ব্যবহার করতে দিলেও হাসপাতাল বানানোর মূল কাজটি করছে বাংলাদেশ সরকার।
বসুন্ধরা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সায়েম সোবহান আনভীর জানান, এই হাসপাতাল নির্মাণের জন্য প্রায় আড়ই লক্ষ বর্গফুট জায়গা তারা সরকারকে অস্থায়ীভাবে ব্যবহার করতে দিয়েছেন।
কী কী থাকছে হাসপাতালে
অস্থায়ী হাসপাতালটি নির্মাণের দায়িত্বে থাকা স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান জানান, তিনটি কনভেনশন সেন্টার ও একটি প্রদর্শনী তাঁবুতে ২,০১৩টি শয্যা পাতা হয়েছে।
তিনি বলেন, “এখানে আসলে আইসোলেশন করে রাখা হবে আর পোর্টেবল অক্সিজেন দেওয়ার ব্যবস্থা থাকবে। দুই বেডের মাঝখানে আমরা বিদ্যুতের লাইন টেনে দিয়েছি ওখানে সকেট আছে।
কোন রোগীর যদি পোর্টেবল অক্সিজেন লাগে অথবা অন্য কিছু লাগে যাতে বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া যায় এবং ডাক্তাররা যেন তার রুমে বসে প্রত্যেকটা রোগীকে দেখতে পারেন তার জন্য সিসিটিভির ব্যবস্থা করা হয়েছে। মনিটরটা ডাক্তারের রুমে থাকবে উনি দেখতে পাবেন।”
দুই হাজারের বেশি শয্যা পাতা হলেও কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীর জন্য জরুরি আইসিইউ ইউনিট ও ভেন্টিলেশন সুবিধা এখনো সংযোজন করা হয়নি।
তবে এসব সুবিধার জন্য বসুন্ধরা কনভেনশন সেন্টারের একটি ইউনিটে ৪৫ হাজার বর্গফুট জায়গা প্রস্তুত করা হয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সিদ্ধান্ত না পাওয়ায় এখনো এটি আটকে আছে, বলছেন কর্মকর্তারা।
চিকিৎসা শুরু হবে কবে?
১৪ এপ্রিল থেকে কাজ শুরু করে এরইমধ্যে দুইহাজারের বেশি শয্যা পাতা হলেও কবে থেকে রোগীদের সেবা দেওয়া হবে তা চূড়ান্ত হয়নি।
এই বিষয়ে বসুন্ধরা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সায়েম সোবহান আনভীর জানান, তারা সরকারকে তাদের কনভেনশন সেন্টারগুলো এবং এরসাথে বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা যেমন বিদ্যুৎ, গ্যাস পানি ইত্যাদি ব্যবহার করতে দিচ্ছেন।
ডাক্তার, নার্স বা যন্ত্রপাতি এসবের ব্যবস্থা সরকার নিজেই করবে।
ডাক্তার-নার্স-স্বাস্থ্যকর্মী কতজন লাগবে?
অস্থায়ী হাসপাতালটি পরিচালনার জন্য এরইমধ্যে একজন পরিচালক নিয়োগ দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। হাসপাতাল পরিচালনার খুঁটিনাটি বিষয়গুলো এখনো চূড়ান্ত না হওয়ায় কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি তিনি।
তবে এই প্রকল্পের সাথে সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা জানান, দৈনিক আটঘন্টা করে তিনধাপে দায়িত্ব পালনের জন্য ৩১৫ জন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক, ৬৩০ জন মেডিকেল অফিসার, ১২৬০ জন সিনিয়র নার্স ও ২৫২০ জন স্টাফ নার্সের জন্য চাহিদাপত্র প্রস্তুত করেছেন তারা।
চাহিদাপত্র অনুযায়ী ডাক্তার নার্স ও অন্যান্য সেবাকর্মী পেলে তবে কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা দেওয়া শুরু করা যাবে।
মহামারি শেষে এই হাসপাতালের ভবিষ্যৎ কী?
সায়েম সোবহান আনভীর বলেন, সামাজিক দায়িত্ব থেকেই তারা হাসপাতাল তৈরির জন্য সরকারকে জায়গা দিয়েছেন
তিনি বলেন, “দুনিয়ায় এখন একটা সংকট চলছে। একটি বড় ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান হিসেবে এটা আমাদের দায়িত্ব এই মুহূর্তে সরকারের সাথে একযোগে কাজ করা।”
করোনাভাইরাস মহামারি শেষে এই অস্থায়ী হাসপাতালকে তারা স্থায়ী হাসপাতালে রূপান্তরিত করবেন কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “দেখুন আমরা ব্যবসায়ী। কত ধরনের কত কিছু হতে পারে, এই বিষয়ে এখনো সিদ্ধান্ত নিইনি। তবে অনেক কিছুই তো হতে পারে, তাই না?”