মধ্যপ্রাচ্যের অন্যতম তেলসমৃদ্ধ দেশ কাতারে যাওয়ার সরকারি খরচ এক লাখ ৭৮০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। সরকারের নির্ধারিত রিক্রটিং এজেন্সির মাধ্যমে এই স্বল্প খরচে শ্রমভিসায় যাওয়া যাবে সে দেশে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, মধ্যপ্রাচ্যের দেশ কাতার বাংলাদেশের অন্যতম একটি বড় শ্রমবাজার। দেশটিতে বর্তমানে প্রায় চার লাখের বেশি বাংলাদেশি বিভিন্ন পেশায় কর্মরত রয়েছেন। কিন্তু দুদেশের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে উচ্চ পর্যায়ের কূটনৈতিক যোগাযোগ স্থবির থাকায় জনশক্তি রপ্তানি কিছুটা কমেছে।
সরকারের প্রচেষ্টায় আবার বাড়তে যাচ্ছে দেশটিতে জনশক্তি রপ্তানি। তবে এবার দেশটিতে যেতে ইচ্ছুকরা দালালদের প্রতারণার শিকার যাতে না হয়, সে বিষয়ে কঠোরতা অবলম্বন করা হয়েছে। রিক্রুটিং এজেন্সিগুলো সরকারের অনুমতি ছাড়া কোনো কর্মী বিদেশে পাঠাতে পারবে না।
বৈধ রিক্রুটিং এজেন্সির তালিকা জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো (বিএমইটি) ও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে পাওয়া যাবে।
মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (অভিবাসী কল্যাণ অনুবিভাগ) ড. আহমেদ মুনিরুছ সালেহীন রাইজিংবিডিকে বলেন, বিশ্বের সেরা দেশের কাতারে যেতে দেশটি ভিশন-২০৩০ ঘোষণা করেছে। ২০২২ সালের বিশ্বকাপ ফুটবলের আয়োজকও কাতার। এখন আধুনিক সব স্টেডিয়াম নির্মাণসহ বিশাল কর্মযজ্ঞ চলছে সেখানে। ফলে দেশটিতে এখন বিভিন্ন খাতে বিপুলসংখ্যক লোকবলের চাহিদা রয়েছে। মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে কাজও চলছে।
বাংলাদেশ দূতাবাসের শ্রম কল্যাণ উইং থেকে এ বিষয়ে করণীয়, বিভিন্ন পরামর্শ এবং সতর্কতা সম্বলিত সুপারিশ সেপ্টেম্বরের প্রথমদিকে প্রবাসী, শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়।
মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, দূতাবাসের বার্তায় বাংলাদেশে থেকে কাতারে অভিবাস প্রতাশীদের জন্য করণীয় হিসেবে বলা হয়েছে- স্ব স্ব নিয়োগকর্তা কর্তৃক কাজ ও বেতন সর্ম্পকে জেনে শুনে নিশ্চিত হয়ে যেতে।
কাতার যাওয়ার আগে দেশটিতে নিয়োগকারীর সাথে সম্পাদিত শ্রম চুক্তিপত্রের একটি কপি সংগ্রহ করার পরামর্শ দিয়েছে দূতাবাস। কারণ কাতারে যাওয়ার পর বেতন সংক্রান্ত বা অন্য কোনো সমস্যা হলে এই চুক্তিপত্রের কপি প্রয়োজন পড়বে।
একই সাথে শ্রম চুক্তির কপি সংগ্রহ না করে স্মার্ট কার্ড নিতে বা টিকেট কেনা বা কোনো ধরনের প্রস্তুতি না নেয়ারও পরামর্শ দিয়েছে দূতাবাস।
দালালদের সবসময় এড়িয়ে থাকার পরামর্শ দিয়েছে দূতাবাস। কারণ দালালরা বেশিরভাগ সময় অতিরঞ্জিত তথ্য দিয়ে, বাড়তি বেতন ও সুযোগ সুবিধার কথা কথা বলে সাধারণ মানুষকে ফাঁদে ফেলে। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে- দেশটিতে যে নিয়োগকর্তার বা কোম্পানির ভিসায় যাওয়া হচ্ছে- তাদের সাথে যাওয়ার আগেই শ্রমচুক্তি হয়। আর ওই চুক্তিতে বেতনসহ আনুষাঙ্গিক সব তথ্য থাকে। চুক্তির বাইরে কোনো ধরনের বাড়তি সুবিধা পাওয়া যায় না।
তাই বিদেশ যাওয়ার বিষয়ে দূতাবাসের পক্ষ থেকে সতর্ক করা হয়েছে- সরকার নির্ধারিত খরচের বাইরে কোনো বাড়তি খরচের দায় নিজেকেই নিতে হবে।
কাতারে যারা হাউসমেইড ভিসা নিয়ে যেতে চায়, তাদের বেবি নার্সিং ও গৃহস্থালী কাজের ওপর প্রশিক্ষণ ও আরবি ভাষা জানা উত্তম বলেও দূতাবাস জানিয়েছে।
কাতারের শ্রম আইনের ২১ নম্বর ধারা অনুযায়ী স্ব স্ব নিয়োগকর্তা বা কোম্পানি ছাড়া অন্য স্ব স্ব নিয়োগকর্তা বা কোম্পানির অধীনে কাজ করা অবৈধ। তাই কাতারে যাওয়ার পর ভিন্ন কোম্পানিতে কাজ করার চিন্তা করা উচিত নয়। তাছাড়া চুক্তিবদ্ধ কোম্পানির অধীনে কাজ না করলে দূর্ঘটনার ক্ষতিপূরণ পাওয়া যায় না।
কাতারে ডাক্তারের প্রেসক্রিপশন ছাড়া কোনো ধরনের ওষুধ, এলার্জি-ব্যথানাশক-ঘুমের ওষুধ নেয়া যায় না। এছাড়া ফ্রেনজিট, ট্রামাডল, প্রেগাবালন, ক্লোনাজেপাম এবং ড্রোমাজেপাম ওষুধ কাতারে নেয়া নিষিদ্ধ। এসব ওষুধ কোনো ভাবে কাতারে যাওয়ার সময় না নেয়ারও পরামর্শ দিয়েছে দূতাবাস।
জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) এ সংক্রান্ত হালনাগাদ তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, গত এক মাসে কাতারে জনশক্তি রপ্তানির হার কিছুটা বেড়েছে। চলতি বছরের আগস্ট মাসে ২ হাজার ২২৫ জন কাতারে যায়। এক মাসের ব্যবধানে এই সংখ্যা বেড়েছে। সেপ্টেম্বরে কাতারে গিয়েছে ২ হাজার ৬৮৬ জন। অর্থাৎ আগস্টের তুলনায় ৪৬১ জন বেশি।
দেশভিত্তিক শ্রমিক গমনের সংখ্যার দিক দিয়ে এটি তৃতীয় সর্বোচ্চ। চলতি বছর সর্বোচ্চ জনশক্তি রপ্তানি হয়েছে বরাবরের মতো সৌদি আরবে, দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে ওমান।
গত বছরের ডিসেম্বরে কাতারে অভিবাসন প্রত্যাশীদের ভিসা প্রসেসিং ও বায়োমেট্রিক তথ্য সংগ্রহের সুবিধার্থে ঢাকায় প্রথমবারের মতো কাতারের ভিসা সেন্টার (কিউভিসি) চালু করা হয়। ফলে সে দেশে যেতে ইচ্ছুকদের ভোগান্তি যেমন কমেছে, তেমনি স্বচ্ছতাও বেড়েছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।