ব্যস্ত এ রাজধানীতে কে বা কার খবর রাখে। নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত সবাই।অন্যের খবর নেয়ার সময় বের করা কিছুতেই সম্ভব হয়ে উঠে না।
কিন্তু ইট পাথরের ব্যস্ত এ নগরে ক্ষুর্ধাত মানুষের মুখে বিনামূল্যে একবেলা খাবার তুলে দিচ্ছে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগ।সেচ্ছাসেবক শেখ রবিউল ইসলাম দক্ষিণ যুবলীগের সহ-সম্পাদক রবিউল জানান, আমরা ঢাকা দক্ষিণ যুবলীগের সভাপতি ইসমাইল চৌধুরী সম্রাট ভাইয়ের নির্দেশে প্রতিদিন খাবার বিতরণ করি।
এখানে সবাই সেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করি। সম্রাট ভাইয়ের এ মহৎ উদ্যোগে আমরা দায়িত্ব পালন করতে পেরে অনেক খুশি। ক্ষুর্ধাতদের খাবার বিতরণ থেকে শুরু করে পানি খাওয়ানো, থালা বাসন ধোয়া সবই আমরা করি।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, যুবলীগ কর্মী আব্দুল মান্নান সর্দার, নেতা শেখ ফরহাদ রাজু, সাখাওয়াত হোসেন , হালিম, দিদার, মনির, বাবুলরা সন্ধ্যা থেকে রাত সাড়ে ১০টা পযর্ন্ত টানা কাজ করছিল।
এ বিষয়ে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের সভাপতি ইসমাইল চৌধুরী সম্রাট জানান, তারা প্রায় ১৫’শ ক্ষুর্ধাত লোককে প্রতিরাতে খাবার খাওয়াচ্ছেন।
তিনি জানান, প্রায় ১ বছর ধরে এ খাবার বিতরণ করে আসছেন।সবাইকে পর্যাপ্ত খাবার দেয়া হয় জানিয়ে তিনি বলেন, ক্ষুর্ধাত মানুষগুলোতে পরিবারের মতো মনে হয়।
তাই প্রায়ই তিনি নিজ হাতে তাদের খাবার বিতরণ করেন। আমি তাদের কষ্ট বুঝি, সেই কষ্ট থেকে মানবিক কারণেই আমি এ কাজটি করে আসছি। তারাতো সবাই অসহায়, তাদের মুখে খাবার তুলে দেয়ার চেয়ে বড় আর কি হতে পারে।
তিনি বলেন, আমরা দলের ১৩১ জন চিন্তা করেছি এ কর্মসূচি সব সময় চালু রাখব। এ কর্মসূচি আমাদের হৃদয়ের মধ্যে বেঁধে গেছে।
আমরা যতদিন দায়িত্বে আছি তাদের খাবার দিয়েই যাব। আমরা যারা নেতৃবৃন্দ আছি সবাই মিলে এ কর্মসূচি নিশ্চয় পালন করে যাবো। সবার প্রচেষ্টা আমরা তাদের মুখে খাবার তুলে দেব।
ইসমাইল চৌধুরী সম্রাট যুগান্তরকে জানান, কাকরাইলের যুবলীগের অফিসের সামনে প্রতিদিন সন্ধ্যার পরই উপস্থিত হতে থাকে শত শত ক্ষুর্ধাত লোক।
রাত ৮টার মধ্যে পুরো অফিস চত্ত্বর ভরে আশপাশের রাস্তায় গিয়ে ঠেকে ক্ষুর্ধাত মানুষের সারি সারি লাইন।
সাড়ে ৮টায় শুরু হয় খাবার বিতরণ। প্রতিদিন প্রায় ১৫’শ লোকে খাবার দেয়া হয়। পর্যাপ্ত খাবারের মধ্যে প্রতিদিনই থাকে গরুর মাংস, উন্নত সবজি, ডাল আর চিকন চালের ভাত। শনিবার রাতে সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, কাকরাইলস্থ যুবলীগ অফিসের সামনে সারি সারি ক্ষুর্ধাত মানুষের লাইন। অফিসের সামনে সাজানো খাবারের বড় বড় পাতিল। মাংস, ভাত, সবজি, ডালে ভরা পাতিলের পাশেই দাঁড়িয়ে আছে সেচ্ছাসেবক।
সেচ্ছাসেবকরা রাত সাড়ে ৮টায় এক যোগে বলে উঠলেন, আস আস খাবার নিতে আস। শুরু হয় খাবার বিতরণ। প্রতিবন্ধী ও নারী-পুরুষ শিশুরা এক এক করে খাবার নিচ্ছেন। খাবারের পাত্রগুলো তুলনামূলক একটু বড়। পাত্র ভরে ভরে খাবার দেয়া হচ্ছে। নির্ধারিত স্থানে বসে খাবার খাচ্ছে ক্ষুধার্ত, রয়েছে বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা। কেউ কেউ আবার পর্যাপ্ত খাবার না খেতে পেরে প্যাকেটে ভরে নিয়ে যাচ্ছে।প্রতিবন্ধী ব্যক্তি রুপচান বিবি জানালেন, তিনি প্রায় ৭ মাস ধরে তার দুই নাতি নিয়ে এখানে রাতের খাবার খেতে আসেন। ছোট দুই নাতি সবুর ও মিলনও বললেন, এখানের খাবার অনেক মজা।
অফিসের পাশে বেশ কয়েকজন ব্যবসায়ী জানান, প্রায় এক বছর ধরে সম্রাট ভাই এখানে খাবার বিতরণ করছেন। পর্যাপ্ত খাবার থাকায় প্রায় সময় তারাও সবার সাথে বসে ভাত খান। আশপাশে রাতে ডিউটি করা নাইটগার্ডরাও এখানে রাতের খাবার খায়। রিকশা চালকরা এখানে খাবার খায়।