২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ দেশ পরিচালনার দায়িত্ব নিয়েছে। তারপর টানা তিন মেয়াদে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশ পরিচালনা করছে আওয়ামী লীগ সরকার।
এই তিন মেয়াদের সরকার প্রতিবারই আত্মীয়স্বজন মুক্ত করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সবশেষ ২০১৯ সালের ৭ই জানুয়ারি যে মন্ত্রিসভা গঠিত হয়েছে, সেই মন্ত্রিসভায় কোনো আত্বীয়স্বজনকে তিনি রাখেননি।
এর আগে আত্মীয়দের মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর মেয়ের শ্বশুর ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন ছিলেন একমাত্র সদস্য। যিনি মন্ত্রিসভার অন্তভুর্ত ছিলেন। কিন্তু এবার মন্ত্রিসভায় তিনি থাকেননি।
সেই ধারাবাহিকতায় এবার আওয়ামী লীগের যে কাউন্সিলর অধিবেশন অনুষ্ঠিত হচ্ছে, সেই কাউন্সিল অধিবেশনে প্রেসিডিয়াম ও সম্পাদকমন্ডলী থেকেও আত্মীয় মুক্ত করা হবে বলে জানা গেছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজেই বলেছেন আত্মীয়দেরকে তিনি কেন্দ্রীয় নেতৃত্বে রাখতে চান না। সংশ্লিষ্ট সূত্র গুলো বলছে আত্মীয়দের মধ্যে এখন শেখ ফজলুর করিম সেলিম এবং ইঞ্জিনিয়ার মোশারফ হোসেন প্রেসিডিয়ামের সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।
শেখ হেলাল উদ্দীন কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য হিসেবে রয়েছেন। তবে আওয়ামী লীগের একজন শীর্ষ স্থানীয় নেতা বলেছেন, কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য হিসেবে থাকা না থাকার বিষয়টি গুরুত্বহীন। সম্পাদক মন্ডলী এবং প্রেসিডিয়ামে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কোনো আত্বীয় স্বজনদের না রাখার নীতি গ্রহণ করেছেন।
ঐ নেতা এটাও বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী মনে করেছেন যে, আওয়ামী লীগে যেন যোগ্য তৃণমূলের নেতৃত্ব বেরিয়ে আসতে পারে। এবং যোগ্যতার বলেই যেন প্রেসিডিয়াম সদস্য এবং সম্পাদক মণ্ডলীর সদস্য হতে পারে সেই বিষয়টির উপরই তিনি গুরুত্ব দিচ্ছেন।
এজন্যই তিনি এবার আওয়ামী লীগের নীতি নির্ধারক সংস্থাকে আত্মীয় মুক্ত করার অভিপ্রায় ব্যক্ত করেছেন এবং সেই প্রকিয়া শুরু হয়েছে।
উল্লেখ্য, আগামী ২০ ও ২১ ডিসেম্বর আওয়ামী লীগের কাউন্সিল অধিবেশন অনুষ্ঠিত হবে। এই কাউন্সিল অধিবেশনে আত্মীয়দেরকে প্রেসিডিয়াম এবং সম্পাদক মন্ডলী থেকে বাদ দেওয়া ছাড়াও ৩টি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে পরিবর্তন আসতে পারে বলে আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল সূত্রগুলো নিশ্চিত করেছে। সেগুলো হলো;
১। যারা মন্ত্রীত্বে থাকবেন তারা দলের সম্পাদক মন্ডলী এবং প্রেসিডিয়ামে থাকতে পারবেন না। এই নীতিটি এবার কঠোর ভাবে অনুসরণ করা হতে পারে বলে আওয়ামী লীগের একটি শীর্ষস্থানীয় নেতা নিশ্চিত করেছেন এবং ইতোমধ্যেই দলের গঠনতন্ত্র সংশোধন ও আওয়ামী লীগের কাউন্সিল উদযাপন সংক্রান্ত কমিটির সঙ্গে আলাপকালে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি স্পষ্ট ভাবে বলেছেন, জাতির পিতার যে স্বপ্নের আওয়ামী লীগ ছিল, সেই স্বপ্নের আওয়ামী লীগে যারা দলের নেতৃত্বে থাকবে তারা মন্ত্রিসভার সদস্য থাকতে পারবেন না এই নীতি মেনে চলা হতো।
বঙ্গবন্ধু নিজেই সংগঠনের স্বার্থে মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগ করেছিলেন। কাজেই এবার যারা দলের নেতৃত্বে থাকবেন তাদেরকে মন্ত্রিসভা থেকে বাদ দেওয়া হতে পারে।
২। যারা ২০০৯ সালের পর আওয়ামী লীগে যোগদান করেছেন, তারা যেই হোক তাদের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ থাকুক বা না থাকুক, তারা বিতর্কিত হোন বা না হোন তাদেরকে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বে আনা হবে না।
২০০৯ সালের পরে যারা আওয়ামী লীগে এসেছেন তাদের ব্যাপারে কোনো নেতিবাচক ধারণা নেই। বরং আওয়ামী লীগে রাজনীতি না করেই কেন্দ্রীয় নেতৃত্বে আসার যে চর্চা হয়েছিল সেই চর্চার সংস্কৃতি থেকে আওয়ামী লীগ বেরিয়ে আসতে চায়।
সেজন্যই এবার নূন্যতম ১০ বছর আওয়ামী লীগের রাজনীতি না করলে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বে কোনো কার্যনির্বাহীর সংসদে তাকে রাখা হবে না বলেই জানা গেছে।
৩। স্থানীয় পর্যায়ে যাদেরকে তৃণমূলের বাতিঘর বলে মনে করা হয়, যারা বিভিন্ন স্থানীয় পর্যায়ে আওয়ামী লীগের সংগঠনকে আগলে রেখেছেন, সেই সমস্থ সংগঠক যারা ত্যাগী ও পরীক্ষিত তাদেরকে বাছাই করে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বে আনা হবে।
একই এলাকা থেকে অনেক বেশি নেতার চেয়ে সারা বাংলাদেশ থেকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা তৃণমূলের যে পরীক্ষিত নেতা আছে তাদেরকে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বে নিয়ে আসার উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে। ছাত্রলীগ ও যুবলীগ থেকে যারা স্থানীয় বা কেন্দ্রীয় পর্যায়ে দায়িত্ব শেষ করেছেন তাদেরকে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বে নিয়ে আসার ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে।
এর মাধ্যমে আওয়ামী লীগের যে নতুন কেন্দ্রীয় কমিটি গঠন করা হবে তাতে তরুণ এবং প্রবীণের যেন একটা সমন্বয় ঘটে সে ব্যাপারে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে আওয়ামী সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এখন আওয়ামী লীগের আগামী কাউন্সিলের নেতৃত্বে কারা আসতে পারে এবং কারা কারা এই কাউন্সিলে আসার ব্যাপারে যোগ্যতা অর্জন করেছে ইত্যাদি পরীক্ষা নিরীক্ষার কাজ করছেন।
তবে আওয়ামী লীগের একজন নেতা বলেছেন এবারের মূল বিষয়গুলো বিতর্কহীন, অনুপ্রবেশকারিহীন এবং ত্যাগী পরিক্ষীতদের সমন্বয়ে কেন্দ্রীয় কমিটি গঠন করা হবে। এমন একটি কেন্দ্রীয় কমিটি আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উপহার দেবেন, যে কমিটির বিরুদ্ধে নূন্যতম অভিযোগও কেউ করতে পারবে না।
এই পরিচ্ছন্ন কমিটি দিয়েই আওয়ামী লীগের ঘুরে দাঁড়ানোর পথযাত্রা শুরু হবে বলে ঐ নেতা মন্তব্য করেছেন।