খুব কম ব্যক্তিই পারেন সাফল্যের পথে নিজ দেশকে এগিয়ে নিতে ও দেশের মানুষকে নেতৃত্ব দিতে। স্বল্প সংখ্যক মানুষই পারেন নতুন নতুন চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করতে।
বসুন্ধরা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সায়েম সোবহান আনভীর সে সব মানুষদের একজন। যিনি স্বপ্নের বাস্তব রূপায়ন করেন।
‘সায়েম সোবহান: যিনি ভবিষ্যতের দিকে তাকিয়ে সম্ভাবনা খুুঁজে পান, যা অন্যরা দেখতে পায় না’ এ শিরোনামে রোববার (২৬ এপ্রিল) এমন একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে সংযুক্ত আরব আমিরাতের শীর্ষস্থানীয় ইংরেজি দৈনিক খালিজ টাইমস।
প্রতিবেদনে বলা হয়, সায়েম সোবহান আনভীর, যিনি ভাবেন সমাজ নিয়ে দেশ নিয়ে। এমন ভাবনা, নিজ প্রতিষ্ঠানে সর্বাধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার ও উদ্ভাবনী শক্তি তাকে উদ্যোক্তা হিসেবে অন্য দশজনের চেয়ে আলাদা করে রেখেছে। শুধু বাংলাদেশ নয় বিশ্বের সেরা উদ্যোক্তাদের কাতারে উঠে এসেছেন তিনি।
লন্ডনে আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি থেকে সাফল্যের সঙ্গে বিবিএ (ব্যবসা প্রশাসনে স্নাতক) সম্পন্ন করার পর ২০০১ সালে বসুন্ধরা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের দায়িত্ব গ্রহণ করেন সায়েম সোবহান। এরপর অল্প সময়ের মাঝেই তিনি নিজেকে একজন শীর্ষ শিল্পদ্যোক্তা হিসেবে প্রমাণ করেছেন। তার নেতৃত্বে বসুন্ধরা গ্রুপ হয়ে উঠে বাংলাদেশের অন্যতম শীর্ষ করপোরেট প্রতিষ্ঠান। অত্যন্ত মানসম্পন্ন পণ্য উৎপাদনের ফলে বসুন্ধরার যেকোনো পণ্য বাংলাদেশের মানুষের কাছে এখন আস্থার প্রতীক হয়ে উঠেছে।
বাংলাদেশের অর্থনীতিতে অন্যতম নিয়ামক শক্তি হিসেবে ভূমিকা রাখছেন সায়েম সোবহান। প্রতিনিয়ত কাজ করে চলেছেন ক্লান্তিহীনভাবে নিরবে। দেশের বাণিজ্য, ম্যানুফেকাচরিং, খেলাধূলা এবং গণমাধ্যম-বিস্তৃত পরিসরে প্রতিটি ক্ষেত্রেই তিনি অবদান রেখে যাচ্ছেন। তার বহুমাত্রিক ও গতিশীল নেতৃত্ব আর অনন্য মেধায় জোরালো প্রবৃদ্ধি হচ্ছে এসব খাতে। বসুন্ধরার ব্যবসা দেশ ও মানুষের কল্যাণেই এগিয়ে যাচ্ছে। যা সীমাবদ্ধ নয় ধর্ম, বর্ণ বা আঞ্চলিক পরিচয়ে।
বসুন্ধরা গ্রুপের অগ্রযাত্রা
বাংলাদেশের অন্যতম শীর্ষ ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান বসুন্ধরা গ্রুপ ১৯৮৭ সালে যাত্রা শুরু করে। প্রতিষ্ঠানটির স্লোগান ‘দেশ ও মানুষের কল্যাণে’। চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহানের স্বপ্ন সামনে রেখেই এগিয়ে যাচ্ছে পুরো প্রতিষ্ঠান। ব্যবসা প্রথম শুরু করে ইস্ট ওয়েস্ট প্রপার্টি ডেভেলপমেন্ট (প্রাইভেট) লিমিটেড নামে আবাসন ব্যবসায়। দেশের পরিকল্পিত নগরায়নে অন্যতম পথপ্রদর্শক হয়ে উঠা প্রতিষ্ঠানটি এখন এ খাতের নেতৃত্ব দিচ্ছে। পরবর্তী সময়ে ১৯৯০ সালের শুরু থেকে অন্যান্য খাতে সম্প্রসারিত হয় বসুন্ধরার ব্যবসা। এখন বাজারের সব বড় বড় খাতেই যেনো নেতৃত্বের আসনে বসুন্ধরা। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য- সিমেন্ট, পেপার ও পাল্প, বিভিন্ন ধরণের টিস্যু, স্টিল, এলপি গ্যাস, খাদ্য ও পানীয়, নিত্যপণ্য, শিপিং, জাহাজ নির্মাণ, ড্রেজিং, ট্রেডিং কোম্পানি এবং মিডিয়া ইত্যাদি।
কোম্পানির প্রায় সব মিল কারখানা আইএসও এবং বিএসটিআই সনদপ্রাপ্ত। বসুন্ধরার প্রধান কার্যালয় ঢাকা হলেও পুরো দেশজুড়ে ব্যবসা ও শিল্প কারখানার বিকেন্দ্রীকরণ করা হয়েছে। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে শাখা মিলে প্রতিষ্ঠানটির কর্মী সংখ্যা ৫০ হাজারের ওপরে।
দেশের মানুষকে একইছাদের নিচে সব ধরনের শপিংয়ের সুযোগ করে দিতে ঢাকার প্রাণকেন্দ্রে গড়ে তুলেছে বসুন্ধরা সিটি ডেভেলপমেন্ট লিমিটেড। যা তৃতীয় প্রজন্মের শপিং কমপ্লেক্স। শুধু তাই নয় সিনেপ্লেক্স, ইনডোর অ্যামিউজমেন্ট পার্ক, ফুড কমপ্লেক্স এবং বিশ্বমানের অন্যান্য সেবাসহ এটি বাংলাদেশের অন্যতম বৃহৎ শপিং কমপ্লেক্স। বসুন্ধরার অগ্রযাত্রায় সর্বশেষ সংযোজন হচ্ছে একটি বিটুমিন প্লান্ট। যা উদ্বোধন করা হয় এ বছর। এটি বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ ও বেসরকারি খাতের একমাত্র বিটুমিন প্লান্ট।
বসুন্ধরা গ্রুপের মিডিয়া শাখা-ইস্ট ওয়েস্ট মিডিয়া গ্রুপ লিমিটেডেরও এমডি হিসেবে নেতৃত্ব দিচ্ছেন সায়েম সোবহান। এটি বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় মিডিয়া কেন্দ্র। এখান থেকে প্রতিদিন বের হচ্ছে তিনটি দৈনিক কালের কণ্ঠ, ডেইলি সান ও বাংলাদেশ প্রতিদিন। এছাড়াও রয়েছে অনলাইন নিউজ পোর্টাল-বাংলানিউজ২৪.কম, এফএম রেডিও- ক্যাপিটাল ৯৪.৮ এবং টিভি চ্যানেল- নিউজ ২৪। মিডিয়া গ্রুপটিতে নতুন যুক্ত হচ্ছে- তিতাস স্পোর্টস ২৪/৭। এটি এখন পরীক্ষামুলক সম্প্রচারে রয়েছে। দেশের সব ঘটনা ও খবর এ মিডিয়াগুলো তুলে ধরছে নিরপেক্ষভাবে ও দায়িত্বশীলতার সঙ্গে। গণমাধ্যমের বস্তুনিষ্ঠতায় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ সায়েম সোবহান আনভীর।
তিনি বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গনের অন্যতম শীর্ষ ক্লাব শেখ রাসেল ক্রীড়া চক্রের চেয়ারম্যান। দেশের ক্রীড়া খাতের উন্নয়নেও বসুন্ধরার প্রচেষ্টা থেমে নেই। বর্তমানে ৫০ একর জমিতে দেশের সবচেয়ে বড় ক্রীড়া কমপ্লেক্স তৈরি করছে বসুন্ধরা গ্রুপ। মানুষকে ইনডোর ও আউটডোর ক্রীড়া সুবিধা দিতে ঢাকায় নির্মাণ করা হয়েছে বসুন্ধরা স্পোর্টস কমপ্লেক্স। এ কমপ্লেক্সে শরীরচর্চা কেন্দ্র, প্রশিক্ষণ সুবিধা ও টুর্নামেন্ট মাঠসহ আরো অনেক সুযোগ সুবিধা রয়েছে।
সায়েম সোবহান মনে করেন, একটি দেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নে বড় ভূমিকা রাখে খেলাধূলা। এর মাধ্যমে সামাজিক স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা যায়, উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি ও সামাজিক সৌহার্দ্য তৈরি হয়। আর সে কারণেই প্রবল আগ্রহ নিয়ে এ খাতে অবদান রেখে যাচ্ছেন তিনি।
মেধা ও দক্ষতার সুনিপণ সমন্বয়ে শিল্পখাতকে আর্টে পরিণত করেছেন সায়েম সোবহান। অসম্ভবকে করেছেন সম্ভব। তার যোগ্য নেতৃত্ব আর উদ্ভাবনী কৌশলে যা একসময় ছিলো স্বপ্ন তাই এখন বাস্তবতা। দেশে ও আন্তর্জাতিকভাবে তিনি একজন সর্বসম্মানিত ও প্রশংসিত ব্যক্তিত্ব। করপোরেট, গণমাধ্যম, ক্রীড়া ও সমাজ সেবায় অবদান রাখায় তিনি জাতীয় ও আন্তর্জাতিক নানা পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন। ২০১৬ সাল থেকে তিনি জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সিআইপি মর্যাদা ভোগ করছেন। ওই বছর থেকেই তার ডাইনামিক নেতৃত্বে ইস্ট ওয়েস্ট মিডিয়া গ্রুপ অর্জন করেছে এনবিআরের সর্বোচ্চ কর প্রদানকারী মিডিয়া গ্রুপের স্বীকৃতি।
দেশ ও মানুষের সেবায় অবদান
মানুষের সেবায় সবসময় কাজ করে যাচ্ছেন সায়েম সোবহান। ব্যক্তি থেকে প্রতিষ্ঠান সবাইকে দান করে যাচ্ছেন। তিনি শুধু অর্থ দিয়েই ক্ষান্ত নন, নিজের মূল্যবান সময় এবং সৃজনশীলতা বিনিয়োগ করছেন সমাজের টেকসই পরিবর্তনে। বাংলাদেশে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ শুরু হলে তিনি মানুষের সহায়তার জন্য প্রধানমন্ত্রীর কল্যাণ তহবিলে ১০ কোটি টাকা দান করেন। এছাড়া বসুন্ধরা গ্রুপ নিজেই অনেক দাতব্য কর্মকান্ড চালিয়ে যাচ্ছে। দেশের যেকোনো সংকট সময়ে প্রতিষ্ঠানটি সরকারের পাশে এসে দাঁড়িয়েছে।
দেশের দরিদ্র ও অসহায় মানুষদের জন্য বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও হাসপাতাল গড়ে তুলেছে বসুন্ধরা। যার অন্যতম বসুন্ধরা-আদ-দ্বীন মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল এবং অ্যাডভোকেট আতামেয়া ফ্রি ফ্রাইডে ক্লিনিক, যেখানে দরিদ্র মানুষদের শিক্ষা ও চিকিৎসা সেবা দেওয়া হচ্ছে। বসুন্ধরা আই হসপিটাল অ্যান্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউট দরিদ্র ও বয়স্ক মানুষদের চোখের চিকিৎসা দিচ্ছে ও বিনামূল্যে সার্জারি করছে। বসুন্ধরা টেকনিক্যাল ইনস্টিটিউট সুবিধাবঞ্চিত তরুনদের কারিগরি শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ দিয়ে যাচ্ছে। বসুন্ধরা স্পেশাল চিলড্রেন ফাউন্ডেশন অটিস্টিক শিশুদের শিক্ষা ও পুনর্বাসনে কাজ করে যাচ্ছে। এছাড়া প্রান্তিক জনগোষ্ঠী ও বিধবা নারীদের অর্থনৈতিক ক্ষমতায়নে বসুন্ধরা পরিচালনা করছে সুদমুক্ত ক্ষুদ্র ঋণ।
কোভিড-১৯ সহায়তা
দেশে করোনা ভাইরাস সংক্রমণ শুরু হলে প্রধানমন্ত্রীর কল্যাণ তহবিলে ১০ কোটি টাকা দেওয়ার পাশাপাশি একটি হাসপাতালের জায়গা দেওয়ার প্রস্তাব দিয়ে এ লড়াইয়ে সামনের কাতারে এসে দাঁড়িয়েছেন সায়েম সোবহন আনভীর। তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে প্রস্তাব দেন ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সিটি বসুন্ধরাকে (আইসিসিবি) করোনা রোগীদের চিকিৎসায় ৫ হাজার শয্যার অস্থায়ী হাসপাতালে রুপান্তর করার। যেখানে ২ লাখ ৪০ হাজার বর্গফুট জায়গাজুড়ে হাসপাতালে রুপান্তরের কাজ চলছে। আশা করা যায়, আগামী ১ মে থেকে অস্থায়ী এ হাসপাতালে চিকিৎসাসেবা শুরু করা সম্ভব হবে।
সাম্প্রতিক এক সাক্ষাৎকারে সায়েম সোবহান বলেন, ‘দেশের যেকোনো সংকটময় মুহূর্তে বসুন্ধরা গ্রুপ সবসময় সরকারের পাশে আছে।’ বর্তমান পরিস্থিতিকে অত্যন্ত সংকটময় উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘১৯৭১ সালের পর থেকে এমন কঠিন সময়ের সম্মুখীন হয়নি এ দেশের মানুষ। জাতীয় এ সংকট মোকাবিলায় বসুন্ধরা গ্রুপ তাদের সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে। সমন্বয় ও ভালো যোগাযোগের মাধ্যমে দেশের এ কঠিন পরিস্থিতি মোকাবিলায় আমাদের পাশে দাঁড়ানো উচিত।’
তিনি বলেন, ‘অস্থায়ী হাসপাতাল হিসাবে আইসিসিবি একটি দারুণ জায়গা হবে। কারণ এখানে নির্ভর করার মতো পানি, বিদ্যুৎ, রান্নাঘর, অগ্নিপ্রতিরোধ ব্যবস্থা, কেন্দ্রীয় শীতাতাপ নিয়ন্ত্রণ এবং এয়ার লিফটিং সুবিধা রয়েছে।’
দেশের এ সংকটময় মুহূর্তে পুলিশ, নৌবাহিনী, সেনাবাহিনী ও র্যাবসহ সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে সায়েম সোবহান ব্যক্তিগতভাবে ৫ লাখ ফেস মাস্ক এবং ৫ হাজার পিস পিপিই বিতরণ করেছেন। নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যপণ্যের ২৫ হাজার ব্যাগ দরিদ্রদের মধ্যে ইতোমধ্যে বিতরণ করা হয়েছে। বর্তমানে প্রতিদিন বিতরণ করা হচ্ছে এমন ৩ হাজার ব্যাগ খাদ্যপণ্য।
বাংলাদেশ আজ জিডিপি প্রবৃদ্ধিতে বিশ্বের সবচেয়ে দ্রুতগতি সম্পন্ন দেশগুলোর অন্যতম। এ ক্ষেত্রে বড় অবদান রেখে যাচ্ছে রাজনৈতিক, করপোরেট ও সামাজিক নেতৃত্ব। উন্নয়নশীল ও একটি উন্নত দেশ হওয়ার পথে বাংলাদেশের রুপান্তরে ভূমিকা রেখে যাচ্ছে বসুন্ধরা গ্রুপ। যার নেতৃত্বে রয়েছেন সায়েম সোবহান আনভীর।