কৃষক লীগ, শ্রমিক লীগের পর অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে স্বেচ্ছাসেবক লীগের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দুই ইউনিট উত্তর-দক্ষিণ শাখার সম্মেলন।
সাংগঠনিক গুরুত্ব বিবেচনায় এই সম্মেলনকে কেন্দ্র করে নেতা-কর্মীদের মধ্যে এখন উৎসবের আমেজ। কাদের মাথায় উঠছে উত্তর-দক্ষিণের নেতৃত্বের মুকুট, এটিই এখন তাদের কাছে সবচেয়ে কাঙ্ক্ষিত প্রশ্ন। রাত পোহালেই মিলতে পারে এর উত্তর।
নেতা-কর্মীরা চাইছেন, স্বেচ্ছাসেবক লীগের মহানগর কমিটিতে এমন নেতৃত্ব আসুক, যারা দুর্দিনের কর্মীদের মূল্যায়ন করবে এবং বিতর্কিতদের সংগঠনের স্থান দেবে না।
সোমবার রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে বেলা ১১টায় অনুষ্ঠিত হবে স্বেচ্ছাসেবক লীগ ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সম্মেলন। অন্যদিকে মহানগর উত্তরের সম্মেলন হবে পরদিন মঙ্গলবার রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউটে। আগামী ১৬ নভেম্বর স্বেচ্ছাসেবক লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সম্মেলন হবে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, সোমবার ও মঙ্গলবার পর্যায়ক্রমে স্বেচ্ছাসেবক লীগের দক্ষিণ ও উত্তরের সম্মেলন হলেও এই দুই শাখার সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের নাম ওইদিন ঘোষণা নাও হতে পারে।
১৬ নভেম্বর সংগঠনটির সম্মেলনের দিন কেন্দ্রীয় কমিটির সঙ্গে দক্ষিণ ও উত্তর শাখার কমিটি ঘোষণার কথা রয়েছে। তবে উত্তর-দক্ষিণের সম্মেলনের দিনও পৃথকভাবে মহানগর কমিটির সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের নাম ঘোষণা হতেও পারে। তবে সেই সম্ভাবনা কম।
জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাবেক সভাপতি আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, ‘বিষয়টি নিয়ে এখনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি। এই বিষয়ে রাতে সিদ্ধান্ত হবে।’
স্বেচ্ছাসেবক লীগ সূত্রে জানা গেছে, সংগঠনটির ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ শাখার সম্মেলন হচ্ছে প্রায় ১৩ বছর পর। ২০০৬ সালের ৩১ মে ঢাকা মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। ওই সম্মেলনের মধ্য দিয়ে ঢাকা মহানগরকে উত্তর ও দক্ষিণে ভাগ করে দুটি কমিটি ঘোষণা করা হয়।
উত্তরের সভাপতি নির্বাচিত হন মোবাশ্বের চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক হন ফরিদুর রহমান খান ইরান। ইরান এখন ঢাকার ওয়ার্ড কাউন্সিলর। তখন দক্ষিণের সভাপতি নির্বাচিত হন দেবাশীষ বিশ্বাস। সাধারণ সম্পাদক হন আরিফুর রহমান টিটু।
দলীয় সূত্র বলছে, সম্প্রতি দলের মধ্যে শুরু হওয়া শুদ্ধি অভিযানে স্বেচ্ছাসেবক লীগের কেন্দ্রীয় কমিটিসহ মহানগরের কয়েকজন নেতার বিরুদ্ধে বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের অভিযোগ রয়েছে।
সম্মেলনের এসব নেতা বিবেচনার বাইরে থাকবেন। এজন্য বিশ্ববিদ্যালয় ও মহানগরে ছাত্রলীগের ব্যাকগ্রাউন্ড আছে এবং নেতা থাকাকালীন দক্ষতা, সততা ও ত্যাগী তকমা আছে এমন নেতারা চলে আসবেন দায়িত্বে। অর্থাৎ সাবেক সফল ছাত্রলীগ নেতাদের হাতেই যাচ্ছে নেতৃত্বের দায়িত্ব। এরই মধ্যে নিজস্ব লোকজন ও গোয়েন্দা সংস্থা থেকে তথ্য যাচাই-বাছাই করছেন দলের প্রধান শেখ হাসিনা।
নেতৃত্ব বাছাইয়ের প্রক্রিয়া জানাতে গিয়ে আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, সততা, দৃঢ়তা, আদর্শের প্রতি বিশ্বাস, সর্বোপরি দুর্দিনে পার্টির প্রতি ডেডিকেশন, যারা বিতর্কিত নন, এমন ক্লিন ইমেজের নেতা থেকে নেতৃত্ব নির্বাচন করা হবে।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘ছাত্রলীগের রাজনীতি শেষ করে এসে তারা কোথাও জায়গা পায়না। এজন্যই আমরা স্বেচ্ছাসেবক লীগে তাদের সংগঠিত করতে শুরু করেছিলাম।
প্রথম দিকে অনেক সংকট ছিল। বর্তমানে সংগঠনটি খুব শক্তিশালী হয়েছে সেটা বলব না, এর একটা ভালো ইমেজ কিন্তু রয়েছে। ভবিষ্যতে ছাত্রলীগের সাংগঠনিক নেতারা সংগঠনের আসবেন। এতে সংগঠন আরো শক্তিশালী হবে।’
এদিকে সম্মেলন শেষ সময়ে এসে মহানগরের পদপ্রত্যাশীরা নিজেদের গ্রহণযোগ্যতা ও যোগ্যতা যাচাইয়ের জন্য ছুটছেন সংশ্লিষ্ট নেতাদের কাছে। পদপ্রত্যাশীরা বলছেন, আগামীতে সৎ, যোগ্য ও পরীক্ষিত নেতারা স্বেচ্ছাসেবক লীগের দায়িত্ব পেলে সংগঠনটি আরো বেশি গতিশীল হবে এবং সাংগঠনিকভাবে শক্তিশালী হয়ে সরকারের উন্নয়নের সহযোগী হিসেবে কাজ করতে পারবে।
ঢাকা মহানগর দক্ষিণ শাখা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদের জন্য আলোচনায় আছেন ছাত্রলীগের সাবেক সিনিয়র সহ সভাপতি ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি কামরুল হাসান রিপন, স্বেচ্ছাসেবক লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ, তারিক সাঈদ, সাংগঠনিক সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, ছাত্রলীগ ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আনিসুজ্জামান রানা, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বাবুল আক্তার, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক ওমর ফারুক, স্বেচ্ছাসেবক লীগ দক্ষিণের সমবায় সম্পাদক এইচ এম কামরুল হাসান আইয়ুব।
অন্যদিকে ঢাকা মহানগর উত্তর শাখা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি পদে আলোচনায় আছেন ছাত্রলীগের ঢাকা মহানগর উত্তর শাখার সাবেক সভাপতি ইসহাক মিয়া, স্বেচ্ছাসেবক লীগের বর্তমান কমিটির সহ সভাপতি শফিকুল ইসলাম শফিক, ঢাকা মহানগর উত্তর শাখা স্বেচ্ছাসেবক লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান পান্না, সাংগঠনিক সম্পাদক এ কে এম মনোয়ারুল ইসলাম বিপুল।
স্বেচ্ছাসেবক লীগের সম্মেলন নিয়ে নিজের প্রত্যাশার কথা জানাতে গিয়ে কামরুল হাসান রিপন রাইজিংবিডিকে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের দায়িত্ব পালনের সময়ে এক-এগারোতে তুমুল আন্দোলন হয়েছে পুরান ঢাকায়। সেই আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়ে ব্যাপক হামলার-মামলার সম্মুখীন হয়েছি। জননেত্রী শেখ হাসিনাকে যখন গ্রেপ্তারের পর নিম্ম আদালতে নিয়ে আসা হলো, ওই এলাকা মিছিলে-প্রতিবাদে প্রকম্পিত করেছি। পুলিশি হামলা বুক চিতিয়ে লড়েছি। নেত্রী যদি দায়িত্ব দেন ছাত্রলীগের সাংগঠনিক অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে স্বেচ্ছাসেবক লীগকে সময়পযোগী হিসেবে গড়ে তুলব। দলের জন্য ত্যাগী, যোগ্য ও পরীক্ষিত নেতা যারা আছেন তারা স্বেচ্ছাসেবক লীগের দায়িত্ব আসলে সংগঠন সাংগঠনিকভাবে শক্তিশালী হবে।
আনিসুজ্জামান রানা বলেন, নেতৃত্বে সৎ, গ্রহণযোগ্য, দক্ষ ও কমিটমেন্ট আছে এমন নেতাদের নেতৃত্ব আসতে হবে। যারা নেতৃত্ব পাওয়ার পর কর্মীদের ভুলে না গিয়ে তাদের পাশে নিয়ে রাজপথে থাকবে। কর্মীদের কাছে থেকে সংগঠনকে গতিশীল আর সাংগঠনিকভাবে শক্তিশালী করবে।
দুঃসময়ের নেতাদের মূল্যায়নের এখনই সময় উল্লেখ করে আরেক পদপ্রত্যাশী ইসহাক মিয়া বলেন, ছাত্রলীগের দায়িত্ব পালনের সময়ে পুরোটা সময়ে বিরোধীদলে কেটেছে। অর্থাৎ আন্দোলন সংগ্রামে নেতাকর্মীকে কাছ থেকে দেখেছি। সুতরাং সেই সব দুঃসময়ের নেতাদের স্বেচ্ছাসেবক লীগের শীর্ষ পদের দায়িত্বে আশা করি।
এ কে এম মনোয়ারুল ইসলাম বিপুল বলেন, ‘নেত্রী সৎ রাজনীতির প্রবর্তনের জন্য যে ধারা শুরু করেছেন সেই ধারাবাহিকতার জন্য এমন নেতৃত্ব আসা উচিত, যারা সুন্দর রাজনীতির পরিচায়ক। জননেত্রীর আগামী বাংলাদেশ বিনির্মাণে যারা সরকারের সহযোগী হিসেবে কাজ করবে। যারা দলের ক্রান্তিকালে রাজপথে থেকে গণতান্ত্রিক আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছে তারাই স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতৃত্বে আসবে বলে আমি বিশ্বাস করি।’
১৯৯৪ সালের ২৭ জুলাই ছাত্রলীগের বিভিন্ন পর্যায়ের সাবেক নেতাদের সমন্বয়ে আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগ সংগঠনটি প্রতিষ্ঠা করেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। বর্তমানে আওয়ামী লীগের অন্যতম সহযোগী সংগঠন এটি।