বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেও জরুরি ভিত্তিতে প্রণোদনা!

ডেস্ক রিপোর্টার, প্রকাশ: ২০২০-০৫-০৫ ১৩:২৪:১৫

করোনাভাইরাসের উদ্ভূত পরিস্থিতিতে প্রাথমিকসহ দেশের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। আর এই বিরাজমান সংকটের কারণে বিপাকে পড়েছেন বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গুলোর শিক্ষকরা।

এরই পরিপ্রেক্ষিতে এবং সংকট নিরসনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বরাবর খোলা চিঠি লিখেছেন রাজধানীর বেসরকারি একটি কলেজের অধ্যক্ষ আশরাফুল আযম খান।

চিঠিতে তিনি বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে জরুরি ভিত্তিতে প্রণোদনা দেয়ার জোর দাবি জানিয়েছেন। অন্তত শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন নিশ্চিত করতে বলেছেন তিনি।

সেই খোলা চিঠিটি  পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো-

খোলা চিঠিতে তিনি লিখেছেন, ‘আপনি ২৭ এপ্রিল এক ভিডিও কনফারেন্সে বলেছেন, পরিস্থিতি ঠিক না হলে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকবে। হয়তো বন্ধই থাকবে। করোনার ক্রমবর্ধমান গতি দেখে তা-ই মনে হচ্ছে।

তাছাড়া আপাতদৃষ্টিতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়তে কোনো প্রভাব ফেলে না। তাই, ঝুঁকি নিয়ে আপনি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলবেন না, এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু প্রাইভেট শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীদের কী হবে?’

‘সরকারি ও এমপিওভুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর শিক্ষক-কর্মচারীরা না হয় নিয়মিত বেতন-ভাতা পাবেন। কিন্তু যেসব প্রতিষ্ঠান সম্পূর্ণ ব্যক্তিমালিকানাধীন কিংবা সরকারি কোনো সুবিধা গ্রহণ করে না বা পায় না, তাদের শিক্ষক-কর্মচারীদের কী হবে? গত মার্চের শুরুতে হঠাৎ বন্ধ হওয়ায় অধিকাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীদের শূন্য হাতে ঘরে ফিরে লকডাউনে আটকা পরতে হয়েছে। পরিস্থিতি এমন চলতে থাকলে তারা আগামী ছয় মাস সংসার চালাবেন কীভাবে? তাদের সন্তান-পরিজন বাঁচবে কী করে’?

‘দেশের প্রায় ৯০ ভাগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বেসরকারি বা প্রাইভেট। লক্ষ লক্ষ শিক্ষক-কর্মচারী এর সাথে জড়িত। শিক্ষার্থীদের বেতনের ওপর তাদের বেতন নির্ভর করে। প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকলে শিক্ষার্থীরা বেতন দেবে না, এটাই স্বাভাবিক। ফলে, ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও প্রতিষ্ঠান তাদের শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন দিতে পারবে না। তাদের সংসার চলবে কীভাবে?’

‘ধার-দেনা করে, খেয়ে না খেয়ে শিক্ষক-কর্মচারীরা না হয় বাড়িভাড়া দিলেন, কায়ক্লেশে সংসারটা চালালেন। কিন্তু প্রতিষ্ঠান খোলার পর কি তাদের সমস্যা লাঘব হবে? বকেয়া বেতন কি তারা এক সাথে পাবেন? যদি না পান, তাহলে তারা তাদের পূর্বঋণ পরিশোধ করবেন কীভাবে?’

‘ধরে নিলাম, পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলো। অক্টোবরের ১ তারিখে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দিলেন। তখন কজন শিক্ষার্থী এক সাথে ছয় মাসের বেতন দিতে পারবে? সরকারি চাকরিজীবী ও উচ্চবিত্তের সন্তানরা হয়তো বেতনটা পরিশোধ করতে পারবে। যারা প্রবাসী, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী, বেসরকারি চাকরিজীবী, দরিদ্র, শ্রমিক- তারা? তাদের কি এক সাথে ছয় মাসের বেতন দেয়ার সামর্থ তখন থাকবে?’

তিনি আরও লিখেছেন, ‘দীর্ঘ সময়ের করোনা থাবার পর বিশ্বের মতো বাংলাদেশের চিত্রও বদলাবে। ঋণে জর্জরিত থাকবে বেশিরভাগ মানুষ। দেশে থাকবে চরম অর্থনৈতিক সংকট। লক্ষ লক্ষ কর্মহীন মানুষ ছুটবে দিগ্বিদিক। লাগামহীন দ্রব্যমূল্যে নাভিশ্বাস উঠবে মানুষের। দেশজুড়ে থাকবে এক অস্থির পরিস্থিতি। এই অবস্থায় শিক্ষার্থীরা একদিনও ক্লাস না করে ছয় মাসের বেতন একসাথে দিয়ে দেবে কি?’

প্রধানমন্ত্রীকে ‘মানবতার মা’ সম্বোধন করে আশরাফুল আযম খান চিঠিতে লিখেছেন,’এই দেশের জন্যে আপনি ও আপনার পরিবারের যে ত্যাগের নজির রয়েছে, তা পৃথিবীর ইতিহাসে বিরল। দেশের মানুষকে ভালো রাখতে আপনি দিন-রাত চেষ্টা করে যাচ্ছেন। দেশের সবচেয়ে বেশি পরিশ্রমী মানুষ এখন আপনি। করোনা মোকাবেলায় আপনার উদ্যোগ, শ্রম ও তৎপরতা বিশ্বপ্রশংসিত। এই সংকটকালে নানা খাতে আপনি প্রণোদনা ঘোষণা করেছেন। দেশের একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ অংশ প্রাইভেট শিক্ষাপ্রতিষ্ঠাগুলোকে জরুরি ভিত্তিতে প্রণোদনা দেওয়ার সবিনয় অনুরোধ করছি। অন্তত শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতনটা নিশ্চিত করুন।’

মানুষের পাঁচটি মৌলিক অধিকারের মধ্যে শিক্ষা অন্যতম। আর, এই শিক্ষার একমাত্র কারিগর হলেন শিক্ষক। শিক্ষকদের বাঁচিয়ে না রাখলে সামনে দেশের শিক্ষাব্যবস্থা নাজুক অবস্থায় পড়বে। হাজার হাজার শিক্ষক এ পেশা ছেড়ে নিরুপায় হয়ে অন্য পেশায় চলে যেতে পারে। তখন দেশের শিক্ষা এগোবে অন্ধকার বলয়ের দিকে। তাই, উপর্যুক্ত বিষয়গুলো আপনার সদয় বিবেচনায় রাখার জন্য বিনীত অনুরোধ করছি।

বাংলাদেশ জার্নাল/ওয়াইএ